মাসুম আহমেদ মীরা, নিউজ পটুয়াখালী: সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ ও প্রতারকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ পটুয়াখালীর বিভিন্ন স্তরের মানুষ। কখনও মানবাধিকারকর্মী, কখনও সাংবাদিক পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন অপকর্ম। যেসব এলাকায় মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীদের পদচারণা কম, সেখানেই তাদের দৌরাত্ম্য।
ডিবিসি নিউজ এর নাম কপি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর জন্য, ডিপিসি বাংলা টিভি নাম লাগিয়ে পরিচয় দেন স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সাংবাদিক। অথচ সংবাদ লেখা কিংবা উপস্থাপন করার নূন্যতম ধারনা নেই। মূল ধারার গণমাধ্যম কর্মীদের সংবাদ চুরি করে নিজের নাম দিয়ে প্রচার করে দাবি করেন তিনি অনেক বড় সাংবাদিক। নামধারী এই সাংবাদিক, গলায় প্রেসকার্ড হাতে বুম নিয়ে দাপিয়ে বেরায় পটুয়াখালী জেলা শহরসহ কয়েকটি উপজেলায়। সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে মারমুখি হয়েছেন বহুবার।
নামধারী সাংবাদিক রুনা হাওলাদার, বেশিরভাগ সময়ে পাসপোর্ট অফিস এবং কোর্টের সামনে দালালি করেন। কোন পত্রিকা কিংবা মিডিয়ার সাথে যুক্ত নেই, তবে প্রতিদিন সংবাদ সংগ্রহ করার নামে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করেন। তার চলাফেরার কারনে আতঙ্কে থাকে সাধারণ মানুষ। দুইটি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে দাপিয়ে বেরান পটুয়াখালী জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায়। দেখতে পুরুষ মনে হলেও তিনি মহিলা। অনেকে তাকে হিজড়া হিসেবে চিনেন। তার দাবি তিনি দিন প্রতিদিন নামের একটি পত্রিকায় কাজ করেন। তবে এই নামে একটি অনলাইন পোর্টাল ছাড়া কোন পত্রিকার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও নামধারী এই সাংবাদিকের গত এক বছরে প্রকাশিত কোন নিউজ পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, সে কিসের সাংবাদিক?
টাকার বিনিময়ে অখ্যাত পত্রিকার সাইনবোর্ড তৈরি করে দিচ্ছেন মূলধারার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী। গ্যারেজের শ্রমিক, পান বিক্রেতা, চা বিক্রেতা, মোটরসাইকেল চালকসহ অনেকেই নামধারী এসব অখ্যাত পত্রিকার কার্ড কিনে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে পটুয়াখালী জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর দায় কে নিবে?
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে চলা এদের অনেকেই কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত নন। টাকা দিয়ে ইচ্ছামতো পরিচয়পত্র বানিয়ে নেন। কেউ আবার নামমাত্র কোনো অখ্যাত পত্রিকায় যুক্ত। সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র তাদের চাঁদাবাজির হাতিয়ার। এরা এলাকাভিত্তিক কিছু প্রেস ক্লাব গড়ে তোলেন, যা মূলত তাদের ধান্দাবাজির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর প্রেস ক্লাবের কমিটির বিভিন্ন পদই হয়ে ওঠে তাদের মূল পরিচয়।
এ বিষয়ে জানতে ডিপিসি বাংলা টিভির সুবাস দাসের ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে রুনার সাথে কথা বললে, তিনি প্রতিবেদককে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন এবং নোংরা ভাষায় গালমন্দ করেন, যা প্রচারের যোগ্য নয়।
নিউজ পটুয়াখালীর অনুসন্ধানে জানা যায়, এদের কারও কারও বিদ্যার দৌড় মাধ্যমিক পার করলেও অনেকেই মাধ্যমিকের গন্ডিও পার হয়নি। সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে বেড়ালেও সংবাদ লেখা কিংবা তৈরি করার নূন্যতম ধারনা নেই। এদের চাল-চলন, ও কথা বার্তার ধরণ দেখে বোঝার উপায় নেই এরা আসলে কার্ডধারী সাংবাদিক। উপরোন্ত কখনও কখনও জন সাধারণের কাছে প্রকৃত সাংবাদিকদের চেয়েও বেশি প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায় তাদের।
বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ প্রশাসন ও পত্রিকার সম্পাদকের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও তাদের ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে এরা সর্বমহলকে নাজেহাল করে চলেছে। এ চক্রের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজী, প্রতারণা, মারপিট ও যৌণ হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে কারও কারও আবার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ হিসেবে পুলিশের খাতায় নামও রয়েছে। কেউ কেউ রয়েছে পুলিশের সন্দেহের তালিকায়। কারও কারও বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগও রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে এদের দৌরাত্ম্যের শেষ কোথায়?